সম্পৃক্ত দ্রবণ ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ (পাঠ ৫-৭)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - মিশ্রণ | NCTB BOOK
2.2k
Summary

কাজ: সম্পৃক্ত দ্রবণ ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি বিকার, মাপচোঙ, নাড়ানি, লবণ ও পানি।

পদ্ধতি: বিকারটি পরিষ্কার করে ১০০ মিলিলিটার পানি নাও। অল্প অল্প করে লবণ যোগ করতে থাক এবং নাড়তে থাক। যতক্ষণ না লবণ দ্রবীভূত হয়, ততক্ষণ লবণ যোগ করতে থাক। যখন দ্রবণ সম্পৃক্ত হয়, তখন অতিরিক্ত লবণ আর দ্রবীভূত হয় না। অসম্পৃক্ত দ্রবণের ক্ষেত্রে দ্রবীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

দ্রবণীয়তা: ২৫° সেলসিয়াসে ১০০ গ্রাম পানিতে সর্বোচ্চ ৩৬ গ্রাম লবণ দ্রবীভূত হয়, যা লবণের দ্রবণীয়তা। চিনির দ্রবণীয়তা ২১১.৪ গ্রাম।

তরল-তরল দ্রবণ: যেখানে দ্রাবক ও দ্রব উভয়ই তরল, তা তরল-তরল দ্রবণ। যেমন, পানি ও লেবুর রস।

তরল-গ্যাস দ্রবণ: যেখানে দ্রাবক তরল ও দ্রব গ্যাস, যেমন কোমল পানীয়।

দ্রবণে তাপের প্রভাব: দ্রবণে তাপ প্রয়োগ করে দ্রবণের দ্রবণীয়তা বৃদ্ধি পায়। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন সিরিয়াম সালফেট, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে দ্রবণীয়তা কমে যেতে পারে।

কাজ: সম্পৃক্ত দ্রবণ ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি বিকার, মাপচোঙ, নাড়ানি, লবণ ও পানি।
পদ্ধতি: বিকারটি ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নাও। বিকারে মাপচোঙ দিয়ে মেপে ১০০ মিলিলিটার পানি নাও। এবার বিকারের পানিতে অল্প অল্প করে লবণ যোগ করে নাড়তে থাক। এভাবে লবণ যোগ করতেই থাক আর নাড়তেই থাক যতক্ষণ পর্যন্ত যোগ করা লবণ অনেক নাড়লেও আর দ্রবীভূত না হয়।

ক্রমাগত লবণ যোগ করতে থাকলে একপর্যায়ে লবণ যোগ করে অনেক বেশি নাড়লেও লবণ আর দ্রবীভূত হয় না কেন? এর কারণ হলো লবণ যোগ করতে করতে দ্রবণটি সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত হয়েছে, যখন দ্রাবক (পানি) আর দ্রবকে (লবণকে) দ্রবীভূত করতে পারছে না। তাহলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের দ্রাবক সর্বোচ্চ যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত করতে পারে, সেই পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত থাকলে প্রাপ্ত দ্রবণকে সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে। পক্ষান্তরে কোনো দ্রবণে যদি ঐ সর্বোচ্চ পরিমাণের চেয়ে কম পরিমাণের দ্রব দ্রবীভূত থাকে, তবে ঐ দ্রবণ অসম্পৃক্ত দ্রবণ হবে।

উপরের কাজে যোগকৃত লবণ অদ্রবীভূত হওয়ার আগের সকল অবস্থাকেই আমরা অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলতে পারি। সম্পৃক্ত দ্রবণে সামান্য পরিমাণ দ্রব যোগ করে অনেক নাড়লেও দ্রব আর দ্রবীভূত হয় না, পক্ষান্তরে অসম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রব যোগ করে নাড়া দিলে দ্রবণটি সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত দ্রব দ্রবীভূত হতেই থাকে।

দ্রবণীয়তা
তোমরা উপরের অনুচ্ছেদে সম্পৃক্ত দ্রবণ কী তা জানলে। কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম দ্রাবক নিয়ে কোনো দ্রবের সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করতে যত গ্রাম দ্রবের প্রয়োজন হয়, তাকেই ঐ তাপমাত্রায় ঐ দ্রাবকে ঐ দ্রবের দ্রবণীয়তা বলে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম পানি সর্বোচ্চ ৩৬ গ্রাম লবণকে দ্রবীভূত করতে পারে। অর্থাৎ ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানিতে লবণের দ্রবণীয়তা হলো ৩৬। আবার ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানিতে চিনির দ্রবণীয়তা হলো ২১১.৪। অর্থাৎ ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০০ গ্রাম পানি সর্বোচ্চ ২১১.৪ গ্রাম চিনি দ্রবীভূত করতে পারে।
তরল-তরল দ্রবণ
যেসব দ্রবণে দ্রাবক হিসেবে তরল পদার্থ আর দ্রব হিসেবে কঠিন পদার্থ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো হলো তরল- কঠিন দ্রবণ। যদি এমন হয় যে, দ্রব ও দ্রাবক উভয়ই তরল পদার্থ তাহলে ঐ দ্রবণকে তরল-তরল দ্রবণ বলা হয়। আমরা এক গ্লাস পানি নিয়ে তাতে যদি এক চামচ লেবুর রস যোগ করে ভালোভাবে নাড়া দিই, তাহলেই একটি তরল-তরল দ্রবণ পাওয়া যাবে। একইভাবে ভিনেগার বা এসিটিক অ্যাসিড ও পানি দিয়েও তরল-তরল দ্রবণ তৈরি করা যায়।

তরল-গ্যাস দ্রবণ
এবার আমরা কিছু দ্রবণ দেখি, যেখানে দ্রাবক হলো তরল পদার্থ আর দ্রব হলো গ্যাসীয় পদার্থ। কোমল পানীয় যেমন: কোকা কোলা, সেভেন আপ আমরা সবাই চিনি। এ সমস্ত কোমল পানীয়ের বোতল খোলার সাথে সাথে হিস্ শব্দ করে বুদবুদ আকারে গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়। এ গ্যাসীয় পদার্থটি হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড যা পানীয়ের মধ্যে দ্রবীভূত অবস্থায় ছিল। অর্থাৎ কোমল পানীয়গুলোকে আমরা তরল-গ্যাস দ্রবণ বলতে পারি।
তোমরা কি জান পানিতে বসবাসকারী প্রাণীসমূহ (যেমন: মাছ) তাদের নিঃশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কোথা থেকে পায়? তারা তো আমাদের মতো সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে পারে না। পানিতে বসবাসকারী প্রাণীসমূহ অক্সিজেন নেয় পানিতে থাকা দ্রবীভূত অক্সিজেন থেকে। তাহলে নদ-নদী, খাল বিল বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের পানি কিন্তু এক ধরনের তরল-গ্যাস দ্রবণ। এই সমস্ত প্রাকৃতিক পানিতে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য অনেক কিছুই দ্রবীভূত থাকে।
আবার ইদানীং বহুল সমালোচিত ফরমালিনও (যা আইনবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ফল ও মাছের সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে) পানিতে ফরমালডিহাইড নামক গ্যাসের দ্রবণ।

দ্রবণে তাপের প্রভাব

কাজ: দ্রবণে তাপের প্রভাব পর্যবেক্ষণ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি বিকার, নাড়ানি, ত্রিপদি স্ট্যান্ড, তারজালি, একটি নিক্তি, লবণ, পানি ও স্পিরিট ল্যাম্প।


পদ্ধতি: একটি পরিষ্কার বিকারে ১০০ গ্রাম পানি নিক্তি দিয়ে মেপে নাও। ধীরে ধীরে লবণ যোগ করে নাড়তে থাক। যোগকৃত লবণ যদি আর দ্রবীভূত না হয়, তাহলে লবণ যোগ করা বন্ধ কর। এবার ত্রিপদি স্ট্যান্ডের উপর তারজালি রেখে তার উপর বিকারটিকে বসাও এবং স্পিরিট ল্যাম্প দিয়ে বিকারের তলায় তাপ দিতে থাক ও নাড়তে থাক।

তাপ দেওয়ার পর দ্রবণটিতে কি কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে? হ্যাঁ, আস্তে আস্তে অদ্রবীভূত লবণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। এভাবে আরও কিছুক্ষণ তাপ দিতে থাকলে সম্পূর্ণ লবণই দ্রবীভূত হয়ে যাবে। তাহলে এটি বলা যায় যে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে পানিতে লবণের দ্রবণীয়তা বেড়েছে আর সে কারণেই অদ্রবীভূত লবণ তাপ দেয়ার পরে দ্রবীভূত হয়েছে। তবে কিছু কিছু দ্রবণের ক্ষেত্রে (যেমন: পানিতে সিরিয়াম সালফেট ও ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড) তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রবণীয়তা কমে যায়।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...